মুহা. জহিরুল ইসলাম অসীম,নেত্রকোণাঃ
সারা দেশ থেকে বাছাই করে নেত্রকোণার জীবন যুদ্ধে হার না মানা উদ্যোমী নারী উদ্যোক্তা নাসিমা-কে তার কাজের স্বীকৃতি সন্মাননা দিল ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) উইমেন ফোরাম।
শুক্রবার (৮ মার্চ) রাজধানীতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই নারী উদ্যেক্তার হাতে সন্মাননা পদক তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
ই-ক্যাব ওমেন ফোরামের চেয়ারম্যান নাজনীন নাহারের উপস্থাপনায় সন্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক ফারজানা খান।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেসিসের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, ইস্টার্নব্যাংকের উইমেন এন্টারপ্রেনার্স ব্যাকিং বিভাগের প্রধান তানজেরী হক, ই-ক্যাবের, যুগ্ম সম্পাদক নাছিমা আক্তার নিশা, পরিচালক সৈয়দা আম্বারিন রেজাসহ ই-ক্যাব ওমেন ফোরাম কো-চেয়ার জেরীন মারজান খান।
এছাড়াও ই-ক্যাব ওমেন ফোরাম-এর ফোকাল পয়েন্ট বিডা অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফারহা মাহমুদ তৃনার পরিচালায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন শিপন।
“প্রাণের পূর্ণতায় নারী’’ স্লোগানে ই-ক্যাব ওমেন ফোরাম-এর সম্মাননা এবং আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি ছিল উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রদর্শনী।
জানা যায়, নিজ উদ্যোগে চরম দ্ররিদ্রতায় কেবল নিজের মনের জোরে বস্তায় আদা চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে আজ আত্মনির্ভরশীল নেত্রকোনার তিয়শ্রী গ্রামের মেয়ে নাসিমা আক্তার। বিয়ের এগার বছরের মাথায় তিন সন্তানকে নিয়ে খালি হাতে তালাকপ্রাপ্তা হয়ে ২০১৭ সালে বাবার বাড়িতে ফিরতে হয়েছিল নাসিমাকে। লেখাপড়া জানা ছিল না। তাই ভারসা ছিল নিজের দুটি হাত আর মনের জোর। তাই নারী হয়েও বেছে নিয়েছিলেন চাষাবাদ।
অনুষ্ঠানে নাসিমা ছাড়াও আর ৩ জনকে এই সম্মাননা দেন ই-ক্যাব ওমেন ফোরাম। তারা হলেন, মিরপুরের মেয়ে সুবর্ণা। তিনি করোনাকালীন স্বামী চাকরি হারানোর পর সংসারের যখন বেহাল অবস্থা। অবরোধবাসীনি এই সুবর্ণা তখন দিশেহারা। উপায় না পেয়ে শখের রান্নাই হলো অর্থ উপার্জনের উৎস। শুরুতে তেমন কোন সাড়া না পেয়েও থেমে যাননি সুবর্ণা। অদম্য মনোবলে লেগে ছিলেন কাজে। আজ ঢাকার অনেক কনফেকশনারীতে বিক্রি হয় সুবর্ণার কেক। সেই সাথে বিভিন্ন চ্যানেলের রান্নার অনুষ্ঠানে দেখা যায় মিরপুরের মেয়ে সুবর্ণাকে।
এছাড়াও মৌসুমি নামের এক উদ্যোক্তাকে এই পদক দেওয়া হয়েছে। মৌসুমি উচ্চ পর্য়ায়ে পড়াশুনা শেষে নিজের ক্যারিয়ার হলো সংসার আর সন্তান পালন। নিজের একটা ছোট পরিচয় গড়ে তুলতে ঘরে বসেই শুরু করেন বালাচাও তৈরি এবং বিক্রি করা। না উৎসাহ কেউ-ই দেয়নি। বরং ঘরের মানুষের কথা ছিল এত পড়াশুনা করে শেষমেশ শুটকী নিয়ে বিজনেস? হেরে যাননি মৌসুমি। রীতিমত যুদ্ধ করে অর্জন করেছেন বিএসটিআই সনদ। মীনা বাজারের পণ্য তালিকায় আজ যুক্ত হয়েছে মৌসুমীর ট্রাই ড্রাই ফিশ। পাওয়া যায় চালডাল ডটকমেও। রফতানি হয় দুই তিনটি দেশে।
আর অন্যজন হলেন তাহুর। তিনি কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে নিজ উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। শুরুতে পাশে ছিলেন স্বামী। সব সময় সাহস যুগিয়েছেন। কোভিড-১৯ কেড়ে নিল সেই সাহস জাগানিয়াকে। দুটি সন্তান, সাথে সন্তান সম ব্যক্তি উদ্যোগ “তাহুর’’। সাহস হারাননি। বরং গত ১ বছরে বদলে দিয়েছেন নিজ উদ্যোগের চেহারা। ঢকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় ফ্যশন মডেস্ট ওয়্যার হিসাবে তাহুর আজ পরিচিত ব্র্যান্ড। সেই সাথে এ বছর ই তাহুর দেশের সীমানা ছাড়িয়ে যাত্রা শুরু করেছে দুবাইতে।
নেত্রকোণা নারী উদ্যোক্তা নাসিমা বলেন, নেত্রকোণার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরবে নিভৃতে নিজের জীবনের রথ চালানো শুরু করে ছিলাম। কোনো পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার আশা ছিলো কল্পনাতীত। ই-ক্যাবের এই সম্মাননা পাওয়া সত্যিই আমাকে হতবাক করেছে। আমি অভিভূত, বিস্মিত এবং উৎফুল্ল। আমার এই প্রাপ্তিতে যারা সহায়ক হিসেবে নেপথ্যে কাজ করেছেন তাদের প্রতি চির কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সেই সাথে আমার এই প্রাপ্তি আমি আমার শ্রদ্ধেয় বাবা-মা কে উৎসর্গ করলাম। সকলের কাছে দোয়া, সহযোগিতা ও ভালো বাসা প্রত্যাশা করছি।